সবজি চাষ হচ্ছে একটি শখের বিষয়। অনেকের কাছে খাওয়া বড় নয়, শখটাই আসল। দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায় সবকিছুই বাজার থেকে কিনে খাই। কিছু শাক-সবজি আমরা নিজেরা বাগানে চাষ করে খেতে পারি যদি সে রকম সুযোগ ও সময় আমাদের হাতে থাকে।
বাংলাদেশে রবি শস্য চাষের উপযুক্ত সময় শীতকাল হলেও জর্জিয়ায় এর ঠিক উল্টো। কেননা, এখানে শীতকালে শৈত্য প্রবাহ আর আর তুষারের কারণে শাক সবজী চাষ করা সম্ভব নয় । শাক সবজি চাষ করা দূরে থাক বড় বড় গাছ পালার ফুল-পাতা পর্যন্ত ঝরে পড়ে। জর্জিয়ায় সবজি চাষের উপযুক্ত সময় হচ্ছে গ্রীষ্মকাল । এখনই , তথা এপ্রিল মে মাস। এপ্রিল মে থেকে সেপ্টেম্বর অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর চাইলেও আপনি আর কোনো সবজি বা গাছ জীবিত রাখতে পারবেন না। তাই চলুন আর দেরি না করে যাদের সুযোগ আছে এখনই লেগে যাই সবজি চাষে। আসলে গত বছর আমি সবজি চাষ করে নিজে খেয়ে আর আত্মীয়স্বজনদের বিলিয়ে অনেক আনন্দ পেয়েছি, তাই সবাইকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। প্রবন্ধে যে সব ছবি দেওয়া হয়েছে সবই আমার নিজের বাগানের ।
এবার চলুন দেখি কিভাবে প্রবাসে বাড়ির আঙিনায় বাগান করা যায় ?
লাউ বা চিচিঙ্গার গাছ তুলতে এমন মাচা তৈরি করতে হবে
মাটি ছাড়াও টবে চাষাবাদ করা যায় । গাছের আকার ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন সাইজের টব ব্যবহার করতে হবে। টবের নিচে ছিদ্র করে তলায় প্রথমে ১ ইঞ্চি ইটের সুরকি বা খোয়া, তার ওপরে ১ ইঞ্চি পচা গোবর সার দিতে হবে যাতে সহজেই অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে। টবে গাছ লাগানোর আগে ২ ভাগ দো-আঁশ মাটি ও ১ ভাগ পচা গোবর সার এবং এর সঙ্গে ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে টব ভর্তি করে ১০ থেকে ১২ দিন রেখে দেওয়া হয় । প্রবাসে এসব আপনি পাবেন কই ? তবে এসবের জন্য আপনাকে মিরাকল গ্রো গার্ডেন সয়েল বা কাউ ডং ব্যবহার করতে হবে । মিরাকল গ্রো বা কাউ ডং আপনি স্থানীয় নার্সারী, হোম ডিপোর্ট বা লোসে কিনতে পাবেন ।
মাচায় এভাবে লাউ চিচিঙ্গা উঠাতে হবে
তবে গাছের ধরন ও টবের আকার-আকৃতির ওপর ভিত্তি করে সারের পরিমাণ কিছুটা কম বেশি হতে পারে। টবে মাটি ভরাট করার সময় টবের ওপর দিক থেকে ১ ইঞ্চি খালি রাখতে হবে। নার্সারি অথবা বাঙালি গ্রোসারি দোকান থেকে উন্নত মানের চারা, মাটি এবং সার কিনে এনে টবে লাগাতে পারেন কিংবা ভালো মানের বীজ কিনেও আপনি চারা তৈরি করে টবে লাগাতে পারেন।
যাদের বাসার সামনে অথবা পেছনে জায়গা আছে তারা বীজতলা তৈরি করে পছন্দমতো সবজি চাষ করতে পারেন। শাক-সবজির বীজতলার জন্য মাটি হতে হবে ঝুরঝুরে, হালকা অথচ পানি ধরে রাখার ক্ষমতা সম্পন্ন। মাটি যদি এঁটেল হয় তাহলে বীজের অঙ্কুরোদগমের সুবিধার জন্য একভাগ বালি মিশিয়ে হালকা করে নিতে হবে।
মাটিতে বীজ বপনের আগে আগাছা থাকলে তা নিড়ানি দিয়ে তুলে ফেলতে হবে। টবে চারা জন্মালে চারার গোড়ায় যেন আঘাত না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, শাক-সবজির টবগুলোকে অবশ্যই আলো-বাতাস পায়—এমন জায়গায় রাখা দরকার। কিছুদিন পর পর গাছের গোড়ার মাটি নিড়ানি দিয়ে খুঁচিয়ে ঝুরঝুরে করে দিলে ভালো হয়। অনেক শাক-সবজির চারা, বিভিন্ন ধরনের পিঁপড়া বা পোকা-মাকড় নষ্ট করে, সে জন্য হেপ্টাক্লোর-৪০ পরিমাণ মতো দিয়ে পিঁপড়া ও পোকা-মাকড় নিবারণ করা যায়। অতিরিক্ত ঝড় বৃষ্টি, রোদ বা তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য সাময়িকভাবে টব নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে।
বাংলাদেশি হাইব্রীড জাতের লাউয়ের বীজ বপন করতে পারেন
জর্জিয়ার ঝোপ জঙ্গল বনবাদারে প্রচুর হরিণের বিচরণ । বাংলাদেশি লাল শাক এ সব হরিণের খুবই প্রিয় । রাতের বেলা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে এ সব হরিণেরা আপনার বাগানের লাল শাক খেয়ে শাবার করে দিতে পারে । তাই হরিণ থেকে লাল শাক নিরাপদ রাখতে মাঝে মাঝে হরিণ দূরত্বে রাখার কেমিক্যাল ছিটাতে পারেন । বিভিন্ন কোম্পানীর ডিয়ার স্প্রে হোম ডিপোর্ট বা লোসে পাবেন ।
লাল শাক নিরাপদ রাখতে মাঝে মাঝে ডিয়ার স্প্রে ছিটাতে পারেন
যেসব সবজি চাষ করে আপনি নিজের স্বাদ মেটানোর পাশাপাশি সুস্থ শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান—দুটোই পেতে পারেন। যেমন লাউ, এই সবজি পছন্দ করেন না এমন বাঙালি খুব কমই আছেন। ঝিঙের প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে ০.৫ গ্রাম প্রোটিন, ৩৩.৬ মাইক্রো গ্রাম বিটা-ক্যারোটিন, ৫ মিগ্রা ভিটামিন সি, ১৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ২৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস। মুলায় আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন তথা ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও লৌহ। ভেন্ডি বা ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন, ভিটামিন ‘এ’ ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে। শিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। উস্তে বা করলা স্বাদে তিতে হলেও বাংলাদেশের সবার কাছে এটি প্রিয় সবজি হিসেবে পরিচিত। ১০০ গ্রাম করলায় ১.৫-২.০ ভাগ আমিষ, ২০-২৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৮-২.০ মিলিগ্রাম লৌহ এবং ৮৮.৯৬ মিলিগ্রাম খাদ্যপ্রাণ সি আছে।
প্রীমো ইয়োলো সুগন্ধী মরিচ
চাল কুমড়া বা মিষ্টি কুমড়া বছররের বারো মাসই খাওয়া যায় । কচি অবস্থায় এবং পাকিয়ে দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। কুমড়া ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে। শসা কচি অবস্থায় সালাদ ও পরিপূর্ণ হলে তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। শসার প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে ৯৬ ভাগ জলীয় অংশ, ০.৬ গ্রাম আমিষ, ২.৬ গ্রাম শ্বেতসার, ১৮ মিলিগ্রাম গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.২ মিলিগ্রাম গ্রাম লৌহ, ক্যারোটিন ৪০ মাইক্রোগ্রাম, খাদ্যপ্রাণ সি ১০ মিলিগ্রাম গ্রাম রয়েছে। লালশাক সবার কাছেই প্রিয় একটি পুষ্টিকর সবজী । যেমন—আলতা পেটি, ললিতা, রক্তরাঙা, পিংকি কুইন, রক্তজবা ও স্থানীয় জাত। সারা বিশ্বে আলুর পরই টমেটো উৎপন্ন হয় সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ দেশেই টমেটো অন্যতম প্রধান সবজি।
আমার বাগানের লাল গোলাপ
বাগান করবেন মরিচ না লাগালে হয় ? অ্যামেরিকান ক্যারোলিনা রিপার, প্রিমো ইয়োলে, আফ্রিকান পিঙ্ক নাগা এবং বাংলাদেশি বিভিন্ন জাতের নাগাসহ দেশি বিদেশী অনেক জাতের মরিচের চাষ করে থাকি। মরিচের বীজ থেকে চারা গজাতে কিছুদিন সময় লাগে। সুতরাং বিচলিত হবেন না। বীজতলা থেকে চারা গজানো শুরু করলে চারা উঠিয়ে আপনার সুবিধামত স্থানে লাগান। সব ধরনের মরিচের চাষ পদ্ধতি মোটামুটি একই। মনে রাখবেন মরিচের বীজ বীজতলায় ফেলার আগে বীজ ২/৩ দিন ভিজিয়ে রাখা ভাল ।
সবজির সাথে সাথে বিভিন্ন ফুলের গাছও লাগাতে পারেন ।
শনিবারের চিঠি / আটলান্টা/ এপ্রিল ১২, ২০২০
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১২ এপ্রিল ২০২০
https://thesaturdaynews.com | Sikder Rahman
Development by: webnewsdesign.com