নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ২২ মার্চ (রোববার) রাত আটটা থেকে বন্ধ। পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শোনা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে দু–একটি গাড়ি যাচ্ছে–আসছে। গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো–ঘোষিত লকডাউন কার্যকর হয়েছে। নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। পুরো রাজ্যে রোববার সন্ধ্যায় ১২৮ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছে। মৃত আর আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
গভর্নরের জোরালো দাবির পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার নিউইয়র্কে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। দুই দিনের মধ্যে নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন ন্যাশনাল গার্ডকে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মোতায়েন করা হচ্ছে। ফেডারেল ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির (ফেমা) তত্ত্বাবধানে নিউইয়র্কে তিনটি হাসপাতাল স্থাপিত হচ্ছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। এর আগে নগরের মেয়র অভিযোগ করেন, এক লাখ হাসপাতাল বেডের দরকার পড়বে পরের দুই সপ্তাহের মধ্যে। তাদের আছে মাত্র ৫৫ হাজার।
ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ শুরু হয়েছে। গ্লাভস, মেডিকেল বিছানা, এন ৯৫ মাস্ক এবং গাউন আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেনাবাহিনী নিউইয়র্কসহ তিনটি অঙ্গরাজ্য পৌঁছে দেবে। সর্বমোট ৩২টি অঙ্গরাজ্যের সেনা মোতায়েন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য। তার পরে ওয়াশিংটন ১ হাজার ৯৯৬ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৯৫ জন। ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন এই রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ জন। আমেরিকাজুড়ে আক্রান্ত ৩২ হাজার ৮০০ জন। মারা গিয়েছেন ৪০০ জনের ওপর।
নিউইয়র্কের নাজুক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে পাশের রাজ্য নিউজার্সিতে। প্রতিদিন আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। শনাক্তকরণ কেন্দ্র বেড়ে যাওয়ায় লোকজনকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। রোববার একটি ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য কয়েক হাজার গাড়ি লাইন দেওয়ায় আধা ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। রাজ্যের গভর্নর ফিল মারফি বলেন, তাঁদের কাছে অভিযোগ এসেছে, বেশ কিছু এলাকায় লকডাউন ঠিকমতো মানা হচ্ছে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে গভর্নর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এ রাজ্যে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃত মানুষের সংখ্যা ২০ জন এবং আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আমেরিকার প্রত্যন্ত অঙ্গরাজ্যগুলোতেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। এখানেও কিছু লোক পশ্চাৎপদ চিন্তায় আচ্ছন্ন। জর্জিয়া রাজ্যের প্রত্যন্তর এক নগরীতে থাকেন লেখক মঈনুস সুলতান। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমেরিকান ডিপ্লোম্যাট হিসেবে কাজ করেছেন মঈনুস সুলতান। তিনি জানালেন, আমেরিকার কোনো কোনো অঞ্চলে শ্বেতাঙ্গ লোকজন এখনো মনে করছে, এ মহামারি ‘চাইনিজ ভাইরাস’।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এসব গোঁড়া অনুসারীরা মনে করছেন, এ মহামারি তাঁদের স্পর্শ করবে না। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে আমেরিকার বর্তমান নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আমেরিকায় ভাইরাসটি সংক্রমিত হওয়ার আগেই ইবোলা ভাইরাস আফ্রিকায় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশাল অর্থ ব্যয় করেন। মার্কিন সহায়তা পাঠান, যা এবার চীনে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর করা হয়নি। বরং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর অনেক জরুরি বিভাগকে অপ্রয়োজনীয় বলে বন্ধ করে দিয়েছেন। বলেছেন, সরকারের অর্থ সাশ্রয় করছেন।
এখন চিকিৎসক–সংকট, বিভিন্ন বিভাগে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য চরম লোকসংকট দেখা দিয়েছে। তিনি জানালেন, তাঁর এলাকায় দুজন অবসরে যাওয়া ডাক্তারকে কাজে ফিরিয়ে আনা হয়েছে চলমান প্রয়োজন মোকাবিলার জন্য। জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী উৎপাদনের অধিকাংশ কাঁচামাল আমেরিকায় আসে চীন থেকে। ট্রাম্প বলছেন, চীনা ভাইরাস। দেশটির সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যনীতিও এখন নানা টানাপোড়েনের মধ্যে আছে। এ বিষয়ও পরিস্থিতির ওপর প্রভাব পড়ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে নাকাল হয়ে পড়া আমেরিকার নাগরিকদের জন্য নগদ অর্থ সহযোগিতা নিয়ে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। ডেমোক্র্যাট পার্টি কর্মজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসাবান্ধব প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাবে অনড়। রিপাবলিকান নেতারা বড় ব্যবসায়ী, এয়ারলাইন, শিল্পপতিদের ক্ষতি পোষাতে অর্থপ্রবাহ ঢালতে ইচ্ছুক। পরিস্থিতি যা–ই হোক, এ সপ্তাহের মধ্যেই নাগরিকদের নগদ অর্থ সাহায্যের ব্যাপারে সমঝোতা চূড়ান্ত না হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
শনিবারের চিঠি / আটলান্টা/ মার্চ ২৪, ২০২০
বাংলাদেশ সময়: ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ ২০২০
https://thesaturdaynews.com | Sikder Rahman
Development by: webnewsdesign.com